নতুন হত্যাকারীদের মুখ সামনে আসল সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীমের হত্যাকাণ্ডে

Share This Post:

তদন্ত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, যে ব্যক্তি সবকিছু পরিকল্পনা করে, সে আকতারুজ্জামান ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিমকে (আনার) হত্যার জন্য কাউকে ভাড়া করেছিলেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আমানুল্লাহ নামের এক ব্যক্তি এসব তথ্য জানান। পরে মুস্তাফিজুর রহমান ফকির ও ফয়সাল আলীকে ভাড়া করেন আমানুল্লাহ।

মুস্তাফিজুর ও ফয়সাল থাকেন খুলনার ফুলতলায়। জিহাদ ও সিয়াম নামে আরও দুই ব্যক্তিও জড়িত ছিলেন ঘটনায়। সিয়ামকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আটক করেছে বলে জানা গেছে বিভিন্ন সংবাদমাধমে।

কলকাতার নিউ টাউনের যে অ্যাপার্টমেন্টে সাংসদকে খুন করা হয়েছিল সেখানে তদন্তকারীরা প্রথম পৌঁছান। আমানউল্লাহ ও শিলাস্তি নামে এক মহিলার সঙ্গে আকতারুজ্জামান ৩০ এপ্রিল সেখানে যান। আক্তারুজ্জামান ১০ মে বাংলাদেশে ফিরে আসেন, বাকিরা ফ্ল্যাটে থাকেন।

হত্যার পর শিলাস্তি ও আমানুল্লাহ ১৫ মে ঢাকায় উড়ে আসেন। মুস্তাফিজুর ১৭ মে ঢাকায় আসেন এবং পরের দিন ফয়সাল ফিরে আসেন। কিন্তু জিহাদের অবস্থান এখনো জানা যায়নি জানান পুলিশ।

আন্তঃসীমান্ত সোনা চোরাচালান অভিযানে বিরোধের জের ধরে আনোয়ারুলকে পরিকল্পিতভাবে ভারতে নিয়ে আসা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ঝিনাইদহ কোটচাঁদপুর পৌরসভার মেয়র ও সহিদুজ্জামানের ছোট ভাই শাহীন নামে পরিচিত আকতারুজ্জামানকে মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

আকতারুজ্জামানকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে, তবে গত সোমবার তিনি ঢাকা থেকে একটি ফ্লাইটে দিল্লি হয়ে কাঠমান্ডু রওনা হয়েছেন বলে জানা গেছে।

গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, আনোয়ারুল ও আকতারুজ্জামান দুজনেই স্বর্ণ চোরাচালান, হুন্ডিসহ বিভিন্ন অবৈধ কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। তাদের মধ্যে বিরোধের জেরে এই খুনের ঘটনা ঘটেছে বলে তদন্তকারীরা মনে করছেন।

এছাড়াও আনোয়ারুলের বন্ধু গোপাল বিশ্বাস, যার সাথে তিনি ভারতে ছিলেন। তিনি সোনা চোরাচালানের সাথে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। আনোয়ারুলের বিরুদ্ধে চোরাচালানের অভিযোগসহ ২১টি মামলা থাকলেও অনেকগুলো বাদ পড়েন বা খালাস পান।

 ২০০৭ সালে তার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারি করা হলেও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালে তা সরিয়ে দেওয়া হয়।

১২ মে আনোয়ারুলকে প্রলোভন দিয়ে কলকাতায় একটি ভাড়া ফ্ল্যাটে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেদিনই তাকে হত্যা করা হয়। তার লাশ টুকরো টুকরো করে একটি ব্যাগে ভরে রাখা হয়। এতে স্থানীয় কেউ জড়িত কিনা তা নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ। কলকাতা পুলিশ এখনও মৃতদেহ খুঁজে পায়নি।

আনোয়ারুল হত্যার পর খুনিরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও স্বজনদের বিভ্রান্ত করতে নানা কৌশল অবলম্বন করে। তারা আনোয়ারুলের ফোন থেকে বার্তা পাঠায় এবং এর অবস্থান পরিবর্তন করতে থাকে। ভারতীয় গোয়েন্দারা খোঁজ করে দেখে তার ফোন দুটি রাজ্যে সক্রিয় ছিল।

১৩ মে আনোয়ারুলকে হত্যা করা হয়েছিল, কিন্তু সেই রাতে তার হোয়াটসঅ্যাপ থেকে একটি বার্তা পাঠানো হয়েছিল যে তিনি একটি বিশেষ মিশনে দিল্লি যাচ্ছেন। ১৫ মে আরেকটি বার্তা পাঠানো হয়েছিল, ভিআইপিদের সাথে দিল্লিতে তার আগমনের কথা জানিয়ে এবং তাকে যাতে কোনো কল না দেয়া হয় গোপাল বিশ্বাসকে বলেন । অনুরূপ বার্তা বাংলাদেশে তার গৃহকর্মী এবং সহকারীদের পাঠানো হয়েছিল। ১৬ মে তার নম্বর থেকে তার সহকারীর কাছে কল আসে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের বলেন, আনোয়ারুলের হত্যা পারিবারিক, আর্থিক বা অন্য কোনো কারণে হয়েছে কিনা তা তদন্ত করছে এবং ভারতীয় পুলিশ এবিষয়ে সহযোগিতা করছে।

S.A.M.U.R.A.I
S.A.M.U.R.A.I

"The world is a book, and those who do not travel read only a page."
- by Saint Augustine 🥷