বছরে বিদ্যুতের দাম তিন দফায় বাড়ানোর প্রস্তাব দেয় আই এম এফ(IMF)

Share This Post:

সরকার প্রতি তিন মাস অন্তর বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পরিকল্পনা করায় উদ্যোক্তারা উদ্বিগ্ন। সরকার বিদ্যুৎ খাতে সহায়তা হিসেবে যে অর্থ দেয় তা কমাতে এই কাজ করতে চায়। তারা আগামী তিন বছরের জন্য বিদ্যুতের দাম বৃদ্বি করার পরিকল্পনা করেছে।

এই মুহূর্তে, সরকার বিদ্যুৎ খাতে সাহায্য করার জন্য ভূতুর্কি দেয়, তাই সরকার ভূতুর্কি কম দিলে বিদ্যুতের দাম বাড়বে। বিভিন্ন খাতের অনেক উদ্যোক্তা এই পরিকল্পনা নিয়ে চিন্তিত।

কয়েকজন উদ্যোক্তা বলছেন, করোনাভাইরাসের পর রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধ এবং ইসরায়েলের সংঘাতের কারণে বিশ্ব অর্থনীতি স্থিতিশীল নয়। এছাড়াও, ব্যবসা করার খরচ বেড়েছে কারণ ডলারের মূল্য বেশি, এবং পর্যাপ্ত টাকা দিয়েও গ্যাস এবং বিদ্যুৎ সপূর্ণ রূপে পাওয়া যাচ্ছে না।

ব্যাংক ঋণের সুদের হারও বেড়েছে। বিদ্যুতের দাম আবার বাড়লে ব্যবসা চালাতে আরও বেশি খরচ হবে। এর মানে স্থানীয় কোম্পানিগুলোও প্রতিযোগিতা দেশিও বাজারে আর থাকবে না। এতে করে আমরা রপ্তানির বদলে আমদানি নির্ভর হয় উঠবো, এই চলমান ডলার সংকটে যা খুবই দুঃখজনক আমাদের জন্য। 

বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা বলেছেন যে তারা কম ভূতুর্কি দিয়ে আগামী তিন বছরে ১২ বার বিদ্যুতের দাম পরিবর্তন করার প্রচেষ্টাতে আছেন। গত বছর, তারা প্রথম তিন মাসে তিনবার এবং ফেব্রুয়ারিতে একবার দাম বাড়িয়েছিলন। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) গত বছর বাংলাদেশকে ৪ দশমীক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছিল, কিন্তু অর্থ পেতে বাংলাদেশকে কিছু শর্ত মানতে হবে।

তার মধ্যে একটি হল বিদ্যুৎ খাতে কম ভূতুর্কি দেয়া এবং জ্বালানির দামের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুসরণ করা। এই বরাদ্দের অর্থ থেকে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে ১০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি পেয়েছে।

প্রতি তিন মাস অন্তর বিদ্যুতের দাম পরিবর্তনের পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে, শীর্ষ ব্যবসায়িক গ্রুপ এফবিসিসিআই-এর সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, “বিদ্যুতে আমাদের সিস্টেম লস কমানো ও সক্ষমতা বাড়ানোর দিকে জোর দিতে হবে।

ব্যবসার জন্য এটি আরও গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের তো ব্যবসা করতে হবে। ভর্তুকি কমাতে গিয়ে যদি বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয় এবং সেটি কতটা, তার ওপর ভিত্তি করে আমরা মন্তব্য করব।” 

গাজীপুরের টঙ্গীর মাজুখানে এক্সক্লুসিভ ক্যান নামের কারখানায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের রঙের ছোট-বড় ক্যান, আইসক্রিমের বক্স, ওষুধের বোতল ইত্যাদি তৈরি করা হয়ে থাকে।

কিন্তু গত মাসের শেষ ছয় দিনে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ না থাকায় তাদের মেশিনগুলো ৫৫ ঘণ্টা বন্ধ থাকাতে লোকসান গুনতে হয় মালিক পক্ষের। এর মোকাবিলায় তারা একটি নতুন জেনারেটর ভাড়া নেয় যা প্রতি মাসে সাড়ে ছয় লাখ টাকায় ১০০০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে।

এক্সক্লুসিভ ক্যান পরিচালনাকারী সৈয়দ নাসির বলেন, “বিদ্যুতের দাম গত বছর তিনবার এবং এ বছর একবার বেড়েছে, কিন্তু এখনও আমাদের সারাক্ষণ বিদ্যুত থাকে নাহ। এপ্রিল মাসে আমাদের ১২ ঘণ্টার বেশি বিদ্যুৎ ছিল না।

যখন বিদ্যুত চলে যায়, তখন আবার  উৎপাদন শুরু করতে ৪০ মিনিট লাগে। এর মধ্যে যদি আবার দাম বাড়ানো হয় তাহলে আমাদের প্রতিযোগিতা থেকে সরে আস্তে হবে।”

বাংলাদেশের অর্থ উপার্জনের সবচেয়ে বড় উপায় হল অন্য দেশে জিনিস বিক্রি করা। জিনিস বিক্রি করে আমরা যে অর্থ উপার্জন করি তার ৮০ শতাংশ  এর বেশি তৈরি কাপড় শিল্প থেকে আসে। কাপড় বানাতে অনেক গ্যাস লাগে।

যেসব কারখানায় কাপড় তৈরি হয় তাদেরও প্রচুর বিদ্যুৎ প্রয়োজন। তাই গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়লে কাপড় বানাতে বেশি খরচ হবে। যা তৈরী কাপড়ের দাম  আরো বৃদ্বি করবে। 

কাপড় তৈরির কারখানার মালিক বিকেএমইএ-এর দায়িত্বে থাকা মোহাম্মদ হাতেম বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা থাকায় যারা অন্য দেশ থেকে কাপড় কিনতেন আগে তারা আগের চেয়ে দ্রুত সময়ে কাপড় কিনতে চান এখন। কিন্তু পর্যাপ্ত গ্যাস এবং বিদ্যুৎ না থাকায় এটা সবসময় সম্ভব হয় না।

এছাড়াও, যেহেতু ডলারের মূল্য বেশি এবং গ্যাস এবং বিদ্যুতের দাম বেশি, আমরা এত সস্তায় কাপড় বিক্রি করতে পারি না। বিদ্যুতের দাম আরও বাড়লে আমরা প্রতিযোগিতা করতে পারব না।

ইস্পাত বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শিল্প। যে কারখানাগুলি ইস্পাত তৈরি করে, সেখানে বিদ্যুত ব্যবহার করে গুরুত্বপূর্ণ ধাতু গোলানো হয়। তাই বিদ্যুতের দাম বাড়লে ইস্পাতের দামও বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

ইস্পাত তৈরির একটি সংঘটন বিএসএমএ-এর দায়িত্বে থাকা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, গত বছর বিদ্যুতের দাম তিনবার এবং এ বছর একবার বেড়ে যাওয়ায় তারা স্টিল তৈরির দাম বিক্রির দামের সঙ্গে মেলাতে পারেনি।

এজন্য সরকারের বড় বড় প্রকল্পগুলোও ধীরগতিতে চলছে। এছাড়াও, লোকেরা নতুন ব্যবসায় বিনিয়োগ করছে না। এসব কারণে ইস্পাতের তেমন চাহিদা নেই।

জাহাঙ্গীর আলম আরও বলেন, “বিদ্যুতের দাম আবার বাড়লে অর্থনীতি সামলাতে না পারলে ভবিষ্যতে খারাপ হবে। মানুষ নতুন ব্যবসায় বিনিয়োগ করবে না। নতুন কোনো কারখানা হবে না।”

SMASHCON
SMASHCON

"Either write something worth reading or do something worth writing."
- by Benjamin Franklin.😎